সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

চেতনার পূর্বপদ

বিগত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চলটিতে “চেতনা” কে সর্বাধিক আলোচিত একটি শব্দ বলা চলে। এই সময়ের মধ্যে কেউ বুঝে, কেউ না বুঝে, সময়ে, অসময়ে এই শব্দটিকে অনেকবার ব্যাবহার করেছেন। “চেতনা” শব্দটির পূর্বে যখন বিশেষ কিংবা ঐতিহাসিক কোনো ঘটনা বা সময় যুক্ত হয় তখন এর তাৎপর্য এমনকি মাহাত্ম্য কয়েক গুন বেড়ে যায়। চেতনার সাথে আমরা যে দুটি শব্দ সচরাচরই ব্যাবহার করি বা করে আসছি তা হল মুক্তিযুদ্ধ(ঘটনা) বা একাত্তর(সময়) আর ধর্ম, আরও স্বতন্ত্রভাবে বলতে গেলে ইসলাম ধর্মের চেতনা। একাত্তরের চেতনা আর ধর্মের চেতনা দুটিই আমাদের জন্য সম গুরুত্বপূর্ণ। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে দুটির কোনোটিকেই আমি ফেলতে পারব না। কিন্তু এক শ্রেণীর লোকের কারণে আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে দুই শ্রেণীর লোকের কারণে(অথবা তার চেয়েও বেশি) আমাদের ধর্ম চেতনা আর মুক্তির চেতনার মধ্যে দ্বন্দ্ব পাকিয়ে গেছে। অথচ এদের মধ্যে আদৌ কোনো তফাৎ নেই কারণ এর দুটিই আমাদের আত্মার চেতনা। মানুষ হিসেবে আমাদের দুটি হাত থাকতে পারে (থাকাটাই স্বাভাবিক) কিন্তু আমাদের মনন-মস্তিষ্ক, হৃদয় কেবল একটাই। দুটি হাত ছাড়া যেমন কোনো কাজই সুচারুভাবে করা সম্ভব নয় তেমনি ধর্ম আর মুক্তি চেতনাদ্বয়ের কোনো একটিকেই ত্যাগ করলে আমাদের অনেকটা পত্রবিহীন ডাল অথবা চাকাবিহীন গাড়ির মতোই অবস্থা হবে। আজকাল অনেকেই চেতনা শব্দটিকে ট্রাম কার্ডের মতো ব্যাবহার করেন আবার অনেকেই শব্দটিকে রাজনীতির বোর্ডে শক্ত গুটি হিসেবে ব্যাবহার করেন, সাধারণ মানুষেরা যদি দ্বিধার আগুনে পুড়ে ছাইও হয়ে যায় কিংবা সংকোচের জলে ডুবে যদি তাদের দম বন্ধ হয়ে আসে তবুও এই শ্রেণীর লোকদের কিছু যায়-আসে না। কিছু যায়-আসার কথাও নয় কারণ যত বেশি দ্বিধা, যত বেশি দ্বন্দ্ব তত বেশি প্রভাব আর প্রতিপত্তি, যত বেশি গুঞ্জণ তত বেশি মনোরঞ্জণ। আর এই শ্রেণীর লোকদের কারণেই যারা চেতনা আসল মর্মার্থ ধরতে পেরেছেন কিংবা যারা সত্যিকারেই ধর্ম আর একাত্তরের চেতনাকে(অথবা যেকোনো একটি) সবার মধ্যে বিলিয়ে দিতে চান তাদের নামও খারাপ হচ্ছে। আর তাই সাধারণ লোকেরা আসল চেতনাধারিদেরকে, চেতনাবাজদের থেকে আলাদা করতে পারে না। ইসলামের চেতনা মানেই মুক্তির বিরোধী নয় আর একাত্তরের চেতনা মানেই ইসলাম বিরোধী নয় এই জানা সত্যটিই আমদের কাছে এখন অজানা হয়ে গেছে, আমরা এখন বুঝেও অবুঝ।

চেতনা আত্মিক একটা বিষয়, এটা সবার অন্তরকেই পরিশোধিত করে বা করতে পারে, যদি না আমরা এটাকেই দূষিত করে ফেলি। মাইক নিয়ে চিৎকার-চ্যাঁচামেচি করলেই চেতনার প্রসার হয় না, এর জন্য প্রয়োজন আত্মার শুদ্ধি। যেভাবে চলছে, মনে হয় পরবর্তী প্রজন্ম একটা অসুখেই ভোগবে আর তা হল দ্বিধা।

হঠাৎ করে চেতনা নিয়ে এতো বকবক করার একটাই কারণ, সেদিন বাসার সামনের রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় দুইটা ছেলের কথোপকথন কানে এল— একটা ছেলে আরেকটা মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছেলেকে মুক্তি বিরোধী বলে গালি দিচ্ছে কারণ ছেলেটি সবসময় পাঞ্জাবি আর মাথায় টুপি পরে থাকে আর এর জবাবে ঐ ছেলেটিও অন্যটিকে ইসলাম বিরোধী বলে গালি দিচ্ছে। এখনকার বাচ্চা ছেলেরাও বিরোধী শব্দের ব্যাবহার শিখে ফেলেছে!! তাদের কথা শুনে পিত্তি জ্বলে গেল, তাই পিত্তি ঠাণ্ডা করার জন্য এতো বকবক করলাম।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পৃষ্ঠাসমূহ

Pages

Recent Articles